আজকে যদি আপনাকে বলা হয় চাকুরির পাশাপাশি ভলান্টিয়ার হিসাবে ৮ ঘন্টা সপ্তাহে ডিউটি দিতে হবে রাস্তায়, আপনি কি পারবেন নামতে রাস্তায় ঠিক করতে রাস্তাকে রাস্তায় চলা মানুষকে রাস্তায় চলা মানুষের মেন্টালিটি কে?
কোন এক
কালে আমি গ্রীনে চাকুরি করতাম তখন যখন সিটি ক্যম্পাস এ আসতাম (মিরপুরে) তখন মনে
হইতো ঢাকার একটা আস্ত চলন্ত বস্তি রাস্তার দুই ধারে । জাস্ট মেট্রো
আসার সাথে সাথে এখন তা অন্য শহরে পরিণত হয়েছে।
আপনারা
যারা কখনো চলাচল করেছেন তারা খেয়াল করলে দেখতে পারবেন, কুড়িল থেকে
মগবাজার (মৌচাক) পর্যন্ত আর একটা চলন্ত আস্ত বস্তি রয়েছে এখন । এই
রোডটা পুরাটাই একটা বাজার বা ঝুপড়ি বাজার,
সাথে পুরা রোডটাই একটা বাস স্টপেজ । সবাই
তার নিজের বাপ-দাদার সম্পত্তি দিয়েছে রাস্তা বানাতে, ভাই দুই মিনিট পরে নামা বা ওঠা
যাবে নাহ একদম বাসার সামনেই নামা লাগবে,
আজকে তো একজন রিতিমত বাসে ঝগড়া শুরু করে
দিয়েছে যে সামনে নামায় দিলো কেন!
আচ্ছা
দেখেন একটা রোডের ফুটপাত দখল যেসব দোকান পাট আর শপিংমল আছে তাদের হাতে, যদিও ব্রাকসহ
অনেকে ভালো কিছু যায়গা ছেড়েছে তবে তা নিতান্তই সামান্য, মোটাদাগে পুরা
ফুটপাত টা দখলে এইসব লোকজনের দোকানের শাটার আর ফ্রটপেজ হিসাবে, তো যখন ফুটপাত
পাবিলিক এর দখলেই আগেই জমিদার রা দখল করে নিয়েছে তখন পাবলিক (ফুটপাতে যারা দোকান
করে থাকে) তারা কই যাবে ? তারা রাস্তার ২০% খেয়ে দিছে দোকান বসায়ে, কুড়িল থেকে
একদম মগবাজার পর্যন্ত আপনি এমন কোথাও দেখবেন না যে ভ্যান বসায়ে বা রাস্তার উপরেই
দোকান বসানো হয় নাই, তাইলে মানুষ হাটবে কই দিয়ে ? রাস্তা দিয়ে ? হ্যা রাস্তা
দিয়েই মানুষ হাটে, তো মানুষ যখন চলতেই পারে রাস্তায় তখন বাপের টাকায় কেনা
রিকশা-অটোরিক্সা তো উঠতেই পারে, লাগাও যাত্রি টানা রাস্তা দিয়ে সাথে উলটা চলা তো আছেই, হাজার হোক
যাত্রি সেবাই মূখ্য উদ্দেশ্য।
তো ভাই
ফুটপাত খেয়ে দিলো দোকানদার রা , রাস্তার ২০% খেয়ে দিলো ফুটপাতে যারা দোকান করত তারা, আরো ২০% খেয়ে
দিলো রিকসা-অটো রিকশা ও হাটা পথে চলা লোকজন,
শেষ যা থাকে তাতে দুইটা বাস চলতে পারে
কোনরকমে পাশাপাশি । আর এই রুটে আবার বাস চলে ২৭ কোম্পানির সো যাত্রির চেয়ে বাসের
চাপ বেশি আছে যেখানেই বাসা সেখানেই ড্রপ অফ আর পিকাপ এর সুবর্ণ সুবিধা ! রাস্তার
মাঝে রেসিং এর এক্সপেরিয়েন্স যাতে নিজ কোম্পানির কোন বাস আগে যেতে না পারে সেজন্য
রাস্তার মাঝে দাড় করায়ে বইসে থাকা !
এসব
যন্ত্রণার মধ্যে যোগ হয়েছে জঘণ্য কিছু প্লানিং তার মধ্যে একটা বাড্ডা ইউলুপ যে
নিজেই রাস্তা করে দিছে ছোট আর আছে লিংক রোড থেকে গাড়ি এসে ইউটার্ন নিয়ে ঘুরে যাওয়া
বা টিভি সেন্টার এর পাশ দিয়ে বনশ্রী প্রবেশ অথবা টিভি সেন্টার এর গেটের অপজিটের
হঠাত কাটা রাস্তা ।
এখানে
ফুটওভার ব্রিজ ঢাকার যেকোন রুটের থেকে অপ্রতুল, সারাদিন চলে ফালতু ধীরগতি সম্পন্ন
সব বিমানের তেলের ট্যাংকার যেগুলানের ইঞ্জিন যে আসলে এখনো স্টার্ট নেয় তাই পৃথিবীর
অষ্টম আশ্চর্য হবার কথা !
এই
রোডে আপনি টেরিফিক পুলিশ কে সেভাবে দেখতে পাবেন নাহ দুই একটা পয়েন্ট ছাড়া, দোষ কি তাদের
তাই না এই রোডে যারা চলে তারা তো আর ঐ সব মানুষের কাতারে পড়ে নাহ যে কিছুদুর পর পর
তদারকির জন্য লোক লাগবে, টেরিফিক পুলিশকে আপনি পাবেন গুলশানের মোড়ে বা এম্বাসি
গুলান এর আশে পাশে, খুব ই স্বাভাবিক তবে কোনদিন দেখবেন না কেউ এই রুটে স্টপেজ
ঠিক করে দিয়েছে বা করেছে এমন যে মহাখালি - নিকুঞ্জ বা উত্তরার রুটের মতন একেকটা
ফুটওভারব্রিজের নিচেই শুধু বাস স্টপেজ !!
বলতে
গেলে হাতিরঝিল এ একক পরিচালনায় দেয়া স্বার্থক, এ থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত ছিলো যে
একক ব্যবস্থাপনায় অসভ্যের মতন বাস নিয়ে রেস খেলে প্রতিযোগিতার সুযোগ নাই আর যদি হয়
স্ট্রং টিকেটিং সিস্টেম ।
যে
কয়দিন ছাত্ররা এই রোডে চেষ্টা করছে টেরাফিক কে কন্ট্রল করতে সে সময় কিন্তু ঠিক ই
ডানেই লেন মাইনা চলছে তবে এখন আর তাদের এত প্যারা দেয়ার কেউ নাই, চা-বিড়ি
খাইতেই টাইম পায় নাহ ডিউটি করবে কখন (কেউ মনকষ্ট পেলেও সত্যিটা এখনকার অন্য সব জায়গার
মতন পরিষ্কার যে মানুষের ডিউটিতে আগ্রহ কম,
রোস্টার করে দিলেও ঠিকঠাক হওয়া দরকার সব
জায়গায়) ।
২৭ টা
বাস মালিকের বাস আপনি নিজে একক টিকেটীং ফিক্সড স্টপেজ এ নিয়ে আসেন এই রুটে দেখেন
কোন চেঞ্জ আসে কিনা ।
আর যাই
বলেন আমার আগারগাও থেকে বাইকে ১৫০, সিএনজিতে ২৫০,
কারে ৩৫০ কিন্তু বাসে ৪০ টাকা লাগে সো
মানুষ তার দৈনন্দিন চলাচলে কখনোই বাস বাদে অন্য কিছুকে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট হিসাবে
গ্রহণ করতে পারবে নাহ, এটা সম্ভব ও নাহ আর ফিজিবল ও নাহ, হয়তো সার্ভিস
ভালো হলে কিছু ভাড়া বাড়তে পারে কিন্তু মানুষ আসলে এ শহরে বাসের নিচে পড়ে আর কতদিন
তার প্রিয়জনকে হারেবে সেটাই দেখার বিষয় ।
চাইলে
অনেক কিছুই করা সম্ভব, তবে আপনার আমার হাতে হয়তো করার মতন সরাসরি কিছু নাই তবে
নিজে ভালো হয়ে স্টপেজেই নামতে পারেন উঠতে পারেন।
আর
একটা বিষয় এই রুটে, একবার শুধু রাম্পুরা ব্রিজের উপর দিয়ে কি পরিমাণ মানুষ পার
হয়ে তা একদিন সকালে বা সন্ধায় দেখিয়েন,
দেখবেন হাজার হাজার মানুষের ঢল যারা অপর
সাইডের হাতিরঝিল এর পাবিলিক ট্রান্সপোর্ট থেকে পায়ে হেটে রাস্তা পার হয়ে এন্ট্রি
করে বনশ্রী রাম্পুরা বা আফতাবনগর বা অন্য কোন গন্তব্যে !! কিন্তু এমন বাল্মার্কা
প্লানিং যে ভাই এনারা কখনোই হিসাব ই করে নাই যে পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট থেকে এত
মানুষ নামার পর এক্সিট রুট কোন দিকে হবে!! রাস্তার উপর দিয়ে নিচ দিয়ে নাকি রাস্তা
দিয়েই !! দারুণ না বেপারটা ?? আমার আপনার মতন ইঞ্জিনিয়ার বা প্লানার ই কিন্তু এই
ফিজিবিলিটি চেক করছে কাজ গুলান করার আগে তারা কিন্তু মাটির নিচ ঊঠে বা আকাশ থেকে
নেমে আসে নাই ! আর এই জিনিস বছরের পর বছর চললেও নেই কোন উল্লেখযোগ্য সমাধান ।।
হুট
করে খুব আশাবাদি হওয়া ঠিক নয় তবে
যখন হুট করে আপনার হাতে স্কোপ আসে কোন
কিছু ঠিক করার তখন কিন্তু আশে-পাশের সবাই আশাবাদি হয় আর চায় যে এবার হয়তো মানুষের
উপকার হবে, মানুষ আশায় বাচে, এটাই নিয়ম প্রকৃতির !
ঢাকার
বাস রুটকে আপনি মোটাদাগে ৬/৭ টা রুটে ভাগ করতে পারেন এবং একক পরিচালনায় যদি
হাতিরঝিল এর মত সিস্টেমেটিক ওয়েতে শুরু করতে পারেন তাহলে দেখেন চেঞ্জ আসে কিনা, এক
বিয়ারটিসিকে কাজে লাগালেও দেখতে পারতেন সফলতা আসে কিনা !
ফিক্সড
স্টোপেজে বাস দাঁড়ানো ঢাকার বাসিন্ধাদের অনেক দিনের স্বপ্ন, যেটা হাতিরঝিল
চক্রাকার, ঢাকা চাকা, গ্রীণ ঢাকা, ইকবাল সহ আরো কিছু বাস সফলতার সাথে পরিচালনা করে
আসতেছে, তাদের রোল মডেল টা এক্সিকিউট করার মতন কি লোকবলের অভাব নাকি সদিচ্ছার
অভাব ?
আজকে যদি আপনাকে বলা হয় চাকুরির পাশাপাশি ভলান্টিয়ার হিসাবে ৮ ঘন্টা সপ্তাহে ডিউটি দিতে হবে রাস্তায়, আপনি কি পারবেন নামতে রাস্তায় ঠিক করতে রাস্তাকে রাস্তায় চলা মানুষকে রাস্তায় চলা মানুষের মেন্টালিটি কে? যদি উত্তর হ্যা হয় তাহলে আপনি নিজেই উত্তর খুজে পেয়ে যাবেন যে কি করা উচিত একজন সুনাগরিক হিসাবে আপনার !
Comments
Post a Comment